বিশেষ ক্ষমতা আইনে কুমিল্লায় করা এক মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিনের ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আপিল বিভাগ।
খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) নিষ্পত্তি করে এ আদেশ দেয়া হয়।
একইসঙ্গে এই মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টকে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল আদালত।
মঙ্গলবার (২৬ জুন) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এজে মোহাম্মদ আলী।
এর আগে গত ২৮ মে কুমিল্লায় নাশকতার দুই মামলায় ছয় মাসের জামিন পান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ জামিনের আদেশ দেন।
পরে হাইকোর্টের জামিনাদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পর গত ২৯ মে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের জামিনাদেশ স্থগিত করেন এবং ৩১ মে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির আদেশ দেন। সে অনুসারে ৩১ মে শুনানির পর আপিল বিভাগ খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত রাখেন এবং রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল করতে আদেশ দেন।
এছাড়া, ২৪ জুন এ বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন আদালত। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন গত ২৪ জুন শুনানির জন্য কার্য তালিকায় আসে। ওইদিন কুমিল্লার হত্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে দেওয়া জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষ হয়।
মামলাটি রায়ের জন্য আগামী ২ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় খালেদা জিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিলের শুনানি শেষে আজ মঙ্গলবার (২৬ জুন) আদেশের দিন ধার্য রাখা হয়।
২০১৫ সালের শুরুর দিকে ২০ দলীয় জোটের অবরোধ চলাকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামে দুষ্কৃতিকারীদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় আইকন পরিবহনের একটি বাসের কয়েকজন যাত্রী অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। আহত হন আরও ২০ জন। সেই ঘটনায় দু’টি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা দু’টি হলো-
হত্যার অভিযোগে মামলা: ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এই ঘটনায় সাত জন যাত্রী মারা যান এবং আরও ২৫/২৬ জন গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনায় পরদিন (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকাল তিনটায় চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান বাদী হয়ে ৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে এ মামলায় আদালতে অভিযোগ পত্র দেওয়া হয়।
বিচার চলাকালে দায়রা আদালতে খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। সেই জামিন আবেদনের পরবর্তী শুনানির জন্য ৭ জুন দিন ধার্য করা হয়। কিন্তু এ অবস্থায় গত ৫ এপ্রিল এ মামলায় খালেদা জিয়াকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। তাই ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারায় হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়।
অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা: ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামের হায়দার পুলের কাছে একটি কাভার্ড ভ্যানে অগ্নিসংযোগ ও আশপাশের বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে এই ঘটনায় ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি চৌদ্দগ্রাম থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে নাশকতার অভিযোগে মামলা হয়। ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে এই মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
খালেদা জিয়াসহ ৩২ জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়। মামলাটি বর্তমানে কুমিল্লার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিচারাধীন। ২০১৭ সালের ৯ অক্টোবর এ মামলায় অভিযোগ আমলে নেয় আদালত। পরে গত ২৩ এপ্রিল এ মামলায় জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। কিন্তু আদালত আবেদনটির পরবর্তী শুনানির জন্য ৭ জুন দিন ধার্য রাখেন। কিন্তু এ অবস্থায় শুনানি না করে এই মামলায় জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আপিল আবেদন করেন খালেদা জিয়া।